তিন (L) এলই সকল অনর্থে মূল

লিখেছেন লিখেছেন ইসহাক মাসুদ ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:১৫:১৫ রাত

কোন এক মুনিষি বলেছেন, থ্রী এল (Three L) জন্য জগতে যত অনার্ত ঝগড়া, ফ্যাসাদ। সেই থ্রী এল হল ল্যান্ড, লেডি, এবং লিডারশীপ ( Land, Lady & Leadership) যাকে বাংলায় বলে ভূমি, নারী ও নেতৃত্ব। এখানে ভূমি বলতে জায়গা জমি ও অর্থকে বুঝানো হয়েছে। কোর্ট কাচারীতে ৫০% ভাগ মামলা জমি জমা সংক্রান্তে, নারী সংক্রান্তে ৩০% এবং নেতৃত্ব নিয়ে বাকি ২০%। মোদ্দাকথা এই থ্রী এল এর বাইরে কোন মামলা মোকাদ্দমা নাই। আবার এই থ্রী এল ছাড়া সমাজিক ও রাষ্টীয় এবং ব্যক্তিগত জীবন চলবেও না। লেডি ছাড়া বাচ্চা কাচ্চা হবে না। বাচ্চা কাচ্চা ছাড়া সমাজ হবে না, সমাজ ছাড়া রাষ্ট চলবে না। যেখানে সমাজ ও রাষ্ট আছে সেখানে লিডারশীপ অপরিহার্য্য। পৃথিবীতে থাকতে হলে ল্যান্ডের প্রয়োজন। মানুষ তার অপরিহার্য্য বিষয় নিয়েই যত ফেতনা ফ্যাসাদ করে অনপরিহার্য্য বিষয় নিয়ে তত করে না। যেমনঃ হাতের নোখ, দাতের ময়লা, মাথার উচ্ছেদ্য চুল, মল মুত্র মানুষের অপরিহার্য্য নয় বরং ত্যাগেই অপরিহার্য্য তাই সেগুলো নিয়ে কারো বাদানুবাদ নাই।

লেডি পর্বঃ মনে করেন শৈশব বন্ধু একই কলেজে পড়ে, দেখা গেল দুই বন্ধু একই নারীর উপর দেওয়ানা মদিনা ব্যাস বন্ধুত্বের ইতি। এক বন্ধু অপর বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে গেল, নজর পড়ল বন্ধু সুন্দরী বোনের প্রতি ব্যাস দীর্ঘদিনের এয়ারানা খতম। এক বন্ধ অপর বন্ধুর স্ত্রীর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বললো বা মোবাইলে যোগাযোগ করলো স্বামী বন্ধু টের পাইলে অমনি দাঙ্গা-হাঙ্গামা। বিবি পরকিয়ায় জড়িত স্বামীর টেনশন। চাকুরীতে নারী কলিকের সাথে গুড় রিলেশন ঐ দিকে স্ত্রীর টেনশন। পথে ঘাটে বখাটের উপদ্রপ মাতা পিতার টেনশন। বোন কারো সাথে মোবাইলে কথা বলে, ভাইয়ে টেনশন।

বখাটে বখে গেছে নারীর কারন। ভাই ভাই রক্তের বাঁধন একই মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসা-বড় হওয়া; ভাইয়ের বৌ ঘরে এলো , শুরু হল ভাইতে ভাইতে হিংসা বিদ্বেষ। ভারী আশা করে মা-বাবা পুত্রধনকে বিবাহ দিয়েছে, পুত্র বৌ নিয়ে টাউনে উঠেছে। পুত্র বৌ বাচ্চা নিয়ে ভাল ভাল খাবার খায় মা-বাবা ঢাল ভাত খায়, কারণ ছেলে টাকা দিছে সীমিত বা দেয় নাই। টাউনে সবার জায়গা হয় শুধু মা-বাবার হয় না। বুঝা গেল লেডির এল কত খারাপ তাকে অচ্ছুত বলবো না কারন তাকে না ছুঁইলে সংসার হবে না। আবার কোথাও নারী সংক্রান্ত নয় এমন জায়গায় জগড়া হচ্ছে, গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় সেখানে নারীই এনভল্ব। মেমনঃ আপনার বাড়ীতে জায়গা নিয়ে জগড়া শুরু হল,গরম গরম কয়েক কথা বলে পুরুষ চলে আসে, কিন্তু ঘরের নারী উসকানীতে তাদের রাগের কয়লায় ফু দেয়াতে সেই জগড়া একদিনে শেষ হয়নি, দিন থেকে মাস বছর চলছে। নারীতে নারীতে জগড়া লেগেছে, পতিদেব কর্ম থেকে এসেছেন, ভাত টাত খাওয়া হয় নাই, ফ্যাসাদের অনলে বাড়ী থেকে গ্রাম জ্বলছে। লেডিদের আল্লাহ ফেতনা করার চাইতে করানো ক্ষমতা দিয়েছেন ড়ের বেশি। ডা. লৎফুর রহমানে উপন্যাসে ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছে নারীর কারনে। ইতিহাসে কোন দেশ পরাস্ত হয়েছে, দেশ শহর নষ্ট হয়েছে নারীর কারনে। অনেক নবী, ইসলামী শাসন শেষ হয়ে গেছে নারীর কারনে। আমাদের দেশে অশান্তি নারীর কারনে। সমাজে অশান্তি,ঘরে ঘরে অশান্তি নারীর কারনে।

লেন্ড পর্বঃ এখানে লেন্ড বলতে জায়গা জমি ও অর্থকে বুঝানো হয়েছে। মনে করেন, এক পিতার ৩ শতাংশ জায়গা আছে, পিতার পুত্র আছে ৪ জন মেয়ে আছে ২ জন। ছোট বেলায় হিবিজিবি ও গাধাগাধি করে মাথা গুজিয়েছে সবাই, কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর ৩ শতাংশ জায়গা ছয় ভাই বোনকে কিভাবে বন্টন করবে? কাগজে কলমে বন্টন শুদ্ধ হলেও বাস্তবে কিভাবে দিবে? দেয়া গেলেও তারা যখন বড় হয়েছে ৪ ভাইয়ে বিবাহ করলে তাদের বৌদের কোথায় রাখবে? বৌদের রাখা গেলেও বাচ্চা হলে তাদের কোথায় রাখবে? একাধিক বাচ্চা হলে কোথায় রাখবে? বাচ্চারা বড় হলে তারা কোথায় যাবে? ঝগড়া শুরু হবে কি না? জায়গার যত পরিধি কমবে ঝগড়ার মাত্রা তত বাড়বে। কারো কাছে মোটামুটি জমি জমা ও জায়গা আছে কিন্তু তার কিছু জয়গা অপরের দখলে অথবা তার নামে আর এস আছে বিএস অন্যের নামে। আপনার পাশের ঘরের মালিক আপনায় জায়গা তার ঘরের সম্প্রসার করছে। সরকারী জয়গা নেতারা দখল করেছে, সরকার পরিবর্তনের সাথে অন্যে দলের নেতারা সেই জায়গা দখল করতে আসালে, রক্তারক্তির কি ভর ধরবে? অথচ মানুষের জায়গার প্রয়োজন মাত্র সাড়ে তিন হাত, তাও আবার অন্যের জায়গায় বা সমাজের জায়গা।

অর্থ এর কথা বলাই বাহুল্য, কাউকে অর্থ দার দিয়েছেন সময় মত পরিশোধ করছে না, তাই মনমালিন্য, ঝগড়াঝাটি। একজনের টাকা অন্যে নিয়ে গেছে, তাই মারামারি। কেউ অংশিদারিত্বে বা শেয়ারে ব্যবসা করছে, একজন বেশি নিচ্ছে সন্দেহ, পরে হিংসা বিদ্বেষ। সবাই মিলে ডাকাতি করছে হাইজ্যাক করছে। ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে মারামারি গোলাগুলি। টেন্ডার নিয়ে দলাদলি। কেউ বিদেশে টাকা পাচার করছে, তাই মামলা জেল হাজত। কেউ আপনার লিগেল কাজটি করে দিচ্ছেনা, আপনাকে দিতে হচ্ছে ঘুষ । সে করছে দূর্নীতি। অর্থ এর কারনে মানুষ দাম্ভিক, চরিত্রহীন , ভন্ড ও প্রতারক হয় এবং চোর ডাকাত ও অন্যায় অবিচারি হয়।

লিডারশীপ পর্বঃ নিয়ে কিছু লেখার অপেক্ষা রাখে না। কারণ আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনা করলে সুস্পষ্ট ভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে। লিডারশীপের নেশায় মার্কিন সম্রাজ্যবাদীরা তাদের বিশ্বমোড়লিপনা রক্ষার করার জন্য সারা বিশ্বে দমন নিপীড়ন করেই চলছে, আফগানিস্তান দখল করার পর, মধ্যপাশ্চ্যের দেশগুলো দখল করা শুরু করেছে। ইতি মধ্যে ইরাক দখল করা শেষ করে সিরিয়া, লিবিয়া ও মিসরের দিকে নজর দিয়েছে। বাংলাদেশে যে সরকার ক্ষমতায় যায় সেই ক্ষমতা আকড়ে রাখার জন্য এতই মরিয়া হয়ে যায় যে, শত শত নিরীহ মানুষকে পাখির মত হ্ত্যা করতে দিধা করে না। আবার প্রতিপক্ষও ক্ষমতায় যওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে হরতাল, অবরোধ জনক্ষতিকারক কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছে। এইতো দেশের লিডারশীপ নিয়ে হাঙ্গামার কথা বললাম। যদি আপনি আপনার এলাকার দিকে দেখেন তাহালে বিষয়টি আপনার আরো ষ্পষ্ট হয়ে যাবে। আপনার এলাকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একজন মেম্বার, একজন চেয়ারম্যান নির্বাচনে যে, টাকা খরচ করেন ৫ বছরে নয় ১৫ বছরেও সে পরিমাণ টাকা তাদের ভাতা হবে না। একজন মেম্বারের ভাতা মাত্র ৭০০ টাকা আর একজন চেয়ারম্যানের ভাতা ৩০০০ হাজার টাকা। কিন্তু একজন চেয়ারম্যান তার নির্বাচনে ব্যয় করেন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আর একজন মেম্বার ব্যয় করেন কমপক্ষে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা। এত টাকা ব্যয় করার পরও পক্ষ প্রতিপক্ষ ও তাদের সর্মথকরা লাঠিসোটা ও আগ্নিয়াস্ত্র নিয়ে অনার্ত সৃষ্টি করে। এই বিষয় নিয়ে রাতদিন চলে যাবে লিখতে লিখতে তাই এখানে ইতি ধরলাম।

বিষাদ সিন্দুর লেখক মীর মোশারফ হোসেন, তার উপন্যাসের জনপ্রিয় বাগদারাটি আমার কাছে অমূলক মনে হয়, তার বাগদারাটি ''অর্থই সকল অনর্থের মূল''। আমার কাছে ঐ মুনিষির বাগদারাটি যুক্তি যক্ত হয়" তিনটি এলই সকল অর্থের মুল।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File